Logo

চট্টগ্রামে পোশাক সেক্টরে বাড়তি নজরদারি

Fazlul Haque
বুধবার, মার্চ ৯, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

BD-154হাসান আকবর, চট্টগ্রাম : ঠুনকো কোন ঘটনাকে পুঁজি করে বিশেষ কোন মহল যাতে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস খাতে যাতে বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশি তৎপরতাও। ইনক্রিমেন্ট নিয়ে সৃষ্ট সংকট থেকে গতকাল চট্টগ্রাম ইপিজেড এর মতো প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা প্রশাসন হালকাভাবে নিচ্ছেনা। সামান্য একটি ঘটনায় ‘এত বড় আন্দোলনকে’ অস্বাভাবিক ভাবেও দেখছেন কেউ কেউ। তবে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে মিটে যাওয়ার পরও প্রশাসন বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সবকিছু নজরদারিতে রাখছে।

দেশের প্রথম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল চট্টগ্রাম ইপিজেড এর ৫ নম্বর সেক্টরে শতভাগ রপ্তানিমুখী ‘এ’ ক্যাটাগরির একটি কারখানা ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল। কোরিয়ান মালিকানাধীন কারখানাটিতে গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল দুইটি বিভাগই রয়েছে। তিন হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করেন এই কারখানায়। গত বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারখানাটি চলে আসলেও কোনদিন শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিয়ে বড় কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। শ্রমিকেরা দশ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দাবি করলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই থেকে চার শতাংশের মাঝে ইনক্রিমেন্ট প্রদান করেছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল কারখানার শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা কারখানার গেটই নয়, একই সাথে ইপিজেড এর প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রশাসনের যথাযথ হস্তক্ষেপ এবং উদ্যোগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। শ্রমিকেরা শুধু কি ইনক্রিমেন্টের জন্য আন্দোলন করেছিল নাকি এর পেছনে অন্য রহস্য রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শ্রমিকদের সাথে বাইরের কোন মহলের ইন্দন রয়েছে কিনা, কেউ পরিস্থিতি ঘোলা করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে কিনা সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ইপিজেডে দেড় শতাধিক কারখানা রয়েছে। এখানে দেড় লাখেরও বেশি শ্রমিক কর্মচারী কাজ করেন। এদের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা সাত শতাধিক গার্মেন্টসের মধ্যে বর্তমানে তিনশটির মতো গার্মেন্টস চালু রয়েছে। এখানেও কাজ করেন অন্তত পাঁচ লাখ শ্রমিক। চট্টগ্রামের গার্মেন্টস খাত নিয়ে বরাবরই সন্তুষ্ট প্রশাসন। ঢাকা অঞ্চলের গার্মেন্টসে বিভিন্ন সময় নানা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলেও চট্টগ্রামে কোন সমস্যা হয়নি।

চট্টগ্রামের গার্মেন্টস মালিক এবং শ্রমিক কর্মচারীদের সুনাম করে বেপজার একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল জানান, এখানকার শ্রমিকদের সাথে মালিকদের সম্পর্কটা অনেক চমৎকার। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মালিক শ্রমিক পক্ষ এখানে যৌথভাবে কাজ করেন। বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে দুয়েকটি ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রামে বড় ধরনের কোন অঘটন কখনো ঘটেনি। বিজিএমইএর একাধিক কর্মকর্তা গতকাল বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, আমরা সবসময় কেবল নিজের স্বার্থই নয়, শ্রমিকদের স্বার্থেরও দেখভাল করি। শ্রমিকেরা আমাদের জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে ভালো রাখার জন্য আমরা সবসময় চেষ্টা করি। বিজিএমইএর কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রামের গার্মেন্টস খাত নানা সংকট অতিক্রম করছে। বিশেষ করে বিদেশি ক্রেতাদের চাপিয়ে দেয়া নানা শর্ত পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে আর যাতে নয়া কোন সংকট তৈরি না হয় সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

মালিক শ্রমিক সুসম্পর্কের উপর কারখানার কর্মপরিবেশই কেবল নয়, উৎপাদনশীলতাও নির্ভর করে বলে উল্লেখ করে বেপজার জেনারেল ম্যানেজার খুরশিদ আলম বলেছেন, আমরা সব সময় সেই প্রত্যাশিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছি।

চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের গার্মেন্টস খাতে বড় কোন সমস্যা নেই। তবে গতকাল হঠাৎ করেই ইপিজেড এর কারখানাটিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলো। ইপিজেড এর প্রধান গেট বন্ধ করে দেয়া হলো। এর সাথে শুধু ইনক্রিমেন্ট নিয়ে হাজার তিনেক শ্রমিকের সমস্যা নাকি আরো কিছু আছে তা আমরা নিশ্চিত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, পুরো বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। হঠাৎ করে এমন করে আন্দোলন করার পেছনে বিশেষ কোন মহলের ইন্দন আছে নাকি শ্রমিকেরা নিজেরাই সংগঠিত হয়ে রাস্তায় নেমেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।