Logo

মুন্সীগঞ্জে পোশাকপল্লী হচ্ছে না, গাজীপুরে খাস জমি চায় বিজিএমইএ

Fazlul Haque
বৃহস্পতিবার, মে ১২, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : পোশাক পল্লী শেষ পর্যন্ত আর হচ্ছে না। দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর মুন্সীগঞ্জের ‘বাউশিয়া পোশাক পল্লী’ প্রকল্প থেকে সরে এসেছে বিজিএমইএ এবং অর্থ ও কারিগরি সহযোগিতা দিতে আসা চীনা প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং করপোরেশন লিমিটেড (ওআইএইচ)। বিকল্প হিসেবে পোশাক কারখানা অধ্যুষিত গাজীপুরের শ্রীপুরে সরকারের কাছে খাস জমি চেয়েছে বিজিএমইএ। জমি পাওয়া গেলে সেখানে পোশাক পল্লী করতে চায় সংগঠনটি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এই প্রস্তাব দিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা পোশাক কারখানাগুলো এক জায়গায় আনতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ার বাউশিয়া মৌজায় পোশাক পল্লী নির্মাণের কথা ছিল। এতে কমপ্লায়েন্ট পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো এবং প্রযুক্তির সব সুবিধা রাখার পরিকল্পনা ছিল। পোশাক পল্লী হলে রফতানিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

পোশাক পল্লী নির্মাণের বিষয়টি গত ১৫ বছর ধরে প্রস্তাব ও আলোচনার পর্যায়ে ছিল। ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর নিরাপদ কর্মপরিবেশের বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। সিদ্ধান্ত হয়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক অনুমোদনের পর প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিজিএমইএকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১৪ সালের জুলাই মাসে। বিজিএমইএর তৎপরতায় ৬০ কোটি ডলারের প্রকল্পে অর্থের জোগান দিতে রাজি হয় বেসরকারি খাতের চীনা প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং করপোরেশন লিমিটেড (ওআইএইচ)। গত বছরের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় তার উপস্থিতিতে বিজিএমইএ এবং ওআইএইচের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হয়। এর আগে-পরে কয়েক দফা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে অবকাঠামো খাতের চীনা এ প্রতিষ্ঠানটি।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমস্যা শুরু হয় জমির মূল্য নিয়ে। প্রকল্পের দাপ্তরিক কাজ শুরুর পর থেকেই

স্থানীয়ভাবে জমির মূল্য বাড়তে থাকে। প্রকল্প শুরু সময় থেকে বর্তমানে মূল্য বেড়েছে অন্তত চারগুণ। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চীনা কোম্পানির আগ্রহে ভাটা পড়ে। এ ছাড়া কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রকল্প এলাকায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রকল্পের চাহিদা মিটিয়ে বাকি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ করার প্রস্তাব করেছে তারা। তবে এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি সরকার। আবার ওআইএইচের কাছ থেকে বেশি দামে প্লট কিনতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকেও খুব আগ্রহ দেখানো হয়নি। এসব কারণে ওআইএইচর এখন আর প্রকল্পটিকে লাভজনক মনে করছে না।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান  বলেন, মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়ায় পোশাক পল্লী শেষ পর্যন্ত আর উদ্যোক্তাদের জন্য লাভজনক হচ্ছে না। সেখানে জমির দাম বেড়েছে অনেক। এখনও পানির নিচে থাকায় ভরাট করা এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা তৈরিতে যে অর্থ ব্যয় হবে তা কারও জন্য লাভজনক হবে না। এ কারণে বিনিয়োগে চীনা প্রতিষ্ঠান ওআইএইচের আগ্রহ কম। তারা অনেক দিন ধরে কেবল যাচাই-বাছাই করেই যাচ্ছে। কিন্তু কার্যকর কোনো সাড়া দিচ্ছে না। ফলে এ প্রকল্পের আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা কম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি এখনও বাদ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েক দিন আগে দেখা করেছেন তিনি। বাউশিয়া পোশাক পল্লীর বিকল্প হিসেবে শ্রীপুরে সরকারি খাস জমি চাওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক কোনো মতামত দেননি। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যে ১০০ বিশেষায়িত শিল্প অঞ্চলে এসইএজেড করা হচ্ছে, সেখানেও পোশাক পল্লী করা যেতে পারে। তবে যেভাবেই হোক বিনিয়োগ খরা কাটাতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সহজলভ্য করা দরকার।

বাউশিয়া প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিক সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৪৯২ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয় ২০১৩ সালে। জমির মূল্য ধরা হয় ৭৭৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর প্রথমবার, ২৫ নভেম্বর দ্বিতীয়বার, ১৯ ডিসেম্বর তৃতীয়বার এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চতুর্থবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিতে বিজিএমইএকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বিজিএমইএর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় অধিগ্রহণ বাতিল করা হয়। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বিজিএমইএ টাকা দেবে কোত্থেকে। সংগঠনের কাছে এত টাকা নেই।’

সূত্র জানায়, তিন বছর আগে প্লট বরাদ্দের আবেদনের সঙ্গে কমপ্লায়েন্ট কারখানার জন্য বিঘাপ্রতি ৪০ লাখ টাকা এবং নন-কমপ্লায়েন্ট কারখানার জন্য ২৫ লাখ টাকা হারে এককালীন জমা নেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এক পর্যায়ে তহবিলের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ফলে তহবিলে খুব বেশি অর্থ জমা পড়েনি। সহসাই উদ্যোক্তাদের এসব অর্থ ফেরত দেওয়া হবে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে।

প্রতিবেদনটি দৈনিক সমকাল পত্রিকা থেকে সংগৃহিত।