Logo

বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

Fazlul Haque
বৃহস্পতিবার, জুন ২, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর হাতিরঝিলের লেক দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ১৮ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে আর কোনো বাধা নেই। হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত দেয়া রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

bgmea.jpg-2013-03-19-

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল এক রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমই ভবন ভাঙার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হা কোর্টের রায় রায় স্থগিত করে দেয়।

আজ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিজিএমইএর পক্ষে ব্যরিস্টার রফিকুল হক ও অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহুববে আলম। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল খারিজ করে দেয়।

হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, “বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রামিত করবে।”

বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতেও নির্দেশ দেয় আদালত।

রায়ে বলা হয়, ক্রেতাদের সঙ্গে ওই চুক্তি ছিল বেআইনি। কারণ, ওই জায়গায় ভবন নির্মাণ বা কোনো অংশ কারো কাছে বিক্রির কোনো অধিকার বিজিএমইএর ছিল না।

“তবে ক্রেতারা যেহেতু নিজেরাও জানত বা তাদের জানা উচিত ছিল যে, এ জমির উপর বিজিএমইএর কোনো মালিকানা নেই এবং ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। সুতরাং তারা কোনো ইন্টারেস্ট পাওয়ার দাবিদার নয়।”

‘আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারী বলে’ শক্তিশালী একটি মহলকে ‘আইনের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে’ এমন যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও রায়ে বলা হয়।

“একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিজিএমইএর আইনের প্রতি আরো বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। তারা তা না করে আইনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে।”

বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য ১৯৯৮ সালে সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয়।

ভবনটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নকশা অনুযায়ী করা হয়নি বলে রাজউক বলে আসছিল। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনও ভবনটি ভাঙার দাবি জানিয়ে আসছিল।

এ প্রেক্ষাপটে বিজিএমইএ ভবনের বৈধতা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর হাই কোর্ট স্বতপ্রণোদিত হয়ে বিজিএমইএ ভবন না ভাঙার কারণ জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করে।

ওই রুলের শুনানি নিয়ে ২০১১ সালে রায়ে ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয় আদালত।

পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন বলে আসছে, উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণী বা প্রকৃতি পরিবর্তনের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই বিজিএমইএ ভবন নির্মাণের জন্য বেগুনবাড়ী খালের একাংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে এবং এতে এর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

আদালত বলেছে, হাতিরঝিলের লেককে কেন্দ্র করে সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই ভবনের কারণে সেই সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এটি একটি বিষফোঁড়া। আদালত এও বলেছে, সরকারি একটি সংস্থার জমি আরেকটি সংস্থা কিভাবে বিজিএমইকে বরাদ্দ দেয়? জলাধার আইন অনুযায়ীও লেক দখল করে গড়ে ভবন গড়ে তোলা অবৈধ।