Logo

অ্যাকর্ডের কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ, প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ!

Fazlul Haque
রবিবার, জুন ৫, ২০১৬
  • শেয়ার করুন

yj-1 ফজলুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারের মন্ত্রী, পোশাক শিল্প কারখানা মালিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছে ইউরোপীয় ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত কারখানা পরিদর্শন জোট ‘অ্যাকর্ড’। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ দেশি-বিদেশী গণমাধ্যমেও প্রশ্ন উঠেছে অ্যাকর্ডের কার্যকারিতা নিয়ে।

অগ্নি দুর্ঘটনা একটি দুর্ঘটনা মাত্র। অ্যাকর্ড এগুলো ঠেকাতে পারবে না। অ্যাকর্ডের পরামশে কেনা কোটি কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি কোনো কাজেরই না। অ্যাকর্ড এদেশে ব্যবসা শুরু করেছে।তারা ব্যবসায়ী। গার্মেন্টস শিল্পের সেবক নয়।

সম্প্রতি অ্যাকর্ড তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে সকলকে। এবছরের ২ ফেব্রুয়ারীতে গাজীপুরে মেট্রিক্স সোয়েটার, ১৭ মে মীম গ্রুপের আলেমা টেক্সটাইল, ৩১ মে টার্গেট ফ্যাশনস লিমিটেড ও সর্বশেষ গতকাল ৪ জুন গাজীপুরের চন্দ্রায় রাইয়ান নীট কম্পোজিট ফ্যাক্টরীর অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আবারও সমালোচনার ঝড় উঠেছে অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে অ্যাকর্ডের কার্যকারিতা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা। এতো কঠিন নিরীক্ষা ব্যবস্থা, কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ ভাবিয়ে তুলেছে সকলকে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা উন্নত করার পরও আমাদের কারখানা দুর্ঘটনা নিয়মিতই ঘটে যাচ্ছে। অগ্নি দুর্ঘটনায় কোটি টাকার বিনিয়োগে কেনা আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোনো কাজেই আসছে না, তাহলে আদৌ কি দরকার অ্যাকর্ডের?

গতকাল রাইয়ান নীট কম্পোজিটে অগ্নিকান্ড ঘটার পরে অ্যাকর্ডের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত কারখানাটির সর্বশেষ রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, অ্যাকর্ড এর দেয়া ২৬টি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন বিষয়ক পরামর্শের ২৪টিই সংশোধন করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বাকী দুটো রয়েছে প্রক্রিয়াধীন। একই ভাবে অগ্নি নিরাপত্তাজনিত ২৮টি পরামর্শের মধ্যে ২১ টিই সংশোধন করা হয়েছে এবং বাকীগুলো প্রক্রিয়াধীন। কাকতালিয় হলেও সত্যি যে, অ্যাকর্ড তার সর্বশেষ আপডেট অগ্নিকান্ডের দিনই তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে।

অন্যদিকে ফেব্রুয়ারী মাসে মেট্রিক্স সোয়েটারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অ্যাকর্ড নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করে ওয়েব সাইটে তাদের বিবৃতি প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে অ্যাকর্ড তালিকাভুক্ত আরো দুইটি কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও অ্যাকর্ডের অবস্থান প্রকাশ করেনি।

রাইয়ান নীট কম্পোজিটের অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুমুল আলোচনা সমালোচনা চলছে। রাশেদ জামান নামের একজন তার টাইমলাইনে গতকালের অগ্নিকান্ডের ঘটনার সংবাদ শেয়ার করে লিখেছেন,


“এই কারখানাটি ACCORD দ্বারা নিরিক্ষন করা ছিল। মানে যেই লাউ সেই কদু আর কি। আসলে ACCORD যে এখানে ডলার এর ব্যাবসা করতে এসেছে সেটা আমাদের বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই কারখানাটি ACCORD ফায়ার সেফটি এবং ইলেকট্রিক সেফটি অডিট এর সমস্ত নির্দেশনা মানার পরেও তার কোন রক্ষা হল না। তাহলে এখন প্রশ্ন হল তারা কি ব্যবসা করতে এসেছে নাকি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প কে ধ্বংস করতে এসেছে ? নাকি আবার সর্ষের মাঝেই ভুত??


সৈয়দ এহেতাসুম কবীর নামের একজন স্বনামধন্য পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের  উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন, কি হচ্ছে আমাদের দেশে? কারখানা গুলো একে একে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কি লাভ অ্যাকর্ড এর পিছনে টাকা খরচ করে???

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস মালিক আরএমজি টাইমসকে বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা একটি দুর্ঘটনা মাত্র। অ্যাকর্ড এগুলো ঠেকাতে পারবে না। অ্যাকর্ডের পরামশে কেনা কোটি কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি কোনো কাজেরই না। অ্যাকর্ড এদেশে ব্যবসা শুরু করেছে।তারা ব্যবসায়ী। গার্মেন্টস শিল্পের সেবক নয়।

রাইয়ান নীট কম্পোজিটের অগ্নিকান্ডের পরে কারখানাটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রথমে অ্যাকর্ড এর রেমিডিয়েশন কোঅর্ডিনেটর ওয়াকিবুল হাসানের সাথে কথা বললে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান স্যারের সাথে কথা বলতে বলেন।

কামরুজ্জামান স্যারের কাছে কারখানাটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার অনুপ কাওয়ালের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুপ কাওয়াল এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি জানান, সন্ধ্যায় ৬ টায় অফিস ছুটি হয়ে গেছে। অফিস ছুটি হয়ে যাওয়ায় তিনি কোনো বিবৃতি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েস এর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পরে আরএমজি টাইমসের পক্ষ থেকে অ্যাকর্ড এর নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েস এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় অ্যাকর্ড টীম কারখানাটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। আমার কাছে এখনো কোনো প্রতিবেদন আসেনি। এবিষয়ে এই মুহুর্তে আমি কিছু বলতে পারবো না। প্রতিবেদন জমা হলে তা পর্যবেক্ষণ করে ওয়েব সাইটে বিবৃতি দেয়া হবে।