ডেস্ক রিপোর্ট : এক গবেষণায় বলা হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলোতে বেতন, ভাতা ও কর্মপরিবেশসহ নানা কারণে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবে এর সমাধানের জন্য কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত হলেও এখানে শ্রমিক, মালিক এবং সরকার এই তিন পক্ষের প্রতিনিধিত্ব আছে এমন কোন স্থায়ী কাঠামো এত দিনেও গড়ে উঠেনি। এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার ঢাকায় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ তাদের একটি সুপারিশ উপস্থাপন করবে।
সুপারিশের বিষয়ে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেন ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের গবেষক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিক অসন্তোষ হওয়ার কারণ বের করা এবং এর নিষ্পত্তির যে বর্তমান ব্যবস্থা আছে তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে পরামর্শ বা সুপারিশ তৈরি করা। সেক্ষেত্রে গার্মেন্টেসে শ্রমিক অসন্তোষের বড় কারণ হচ্ছে মজুরি সংক্রান্ত বিষয়। তাছাড়া অনেক সময় হুট করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে শ্রমিকের চাকরি অনিশ্চিত হয়ে যায়।
বর্তমান সময়ে বেতন কাঠামোর পরিস্থিতি নিয়ে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছর সরকারি যে বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে তাতে খুব সাধারণভাবে গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প কারখানায় বেতন কাঠামো ঘোষণার প্রয়োজন আছে। সুতরাং এই মুহূর্তে বেতন কাঠামো নিয়ে একটা পর্যালোচনা করার প্রয়োজন রয়ে গেছে। বেতন কাঠামো নিয়ে শ্রমিকদের ভূমিকা খুব কম। মজুরি বোর্ডে যদি শ্রমিক প্রতিনিধি থাকেন তাহলে বেতন কাঠামো নিয়ে আলাচনার সুযোগ পান। তবে সব সময় দেখা যায় শ্রমিকরা যখন সোচ্চার হয় তখনই সরকার বেতন কাঠামো পরিবর্তন করেন। শ্রমিকরা সোচ্চার হওয়ার আগে সরকার নিজে থেকে বেতন কাঠামো পুনঃগঠনের নজির খুবই কম।
শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ পেয়েছে। তারা কতটা কথা বলার সুযোগ পেয়েছে সে সম্পর্কে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করা শ্রমিকদের অধিকার। এটি বিভিন্নভাবে বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নের ফলাফল যে খুব উৎসাহব্যাঞ্জক তা নয়। ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে আগে যে অলিখিত বিধি নিষেধ ছিল সেগুলো শিথিল হয়েছে। তবে তার অর্থ এই নয় যে সব জায়গায় বাঁধাহীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাচ্ছে। আমাদের গবেষণার একটি বড় ক্ষেত্র ছিল যে আলোচনার যদি কোন কাঠামো না থাকে তাহলে যে কোন সময় তুচ্ছ ঘটনা নিয়েও অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ তৈরি হতে পারে।
এরকম একটি বিষয় নিয়ে মালিক, শ্রমিক বা সরকার, বিভিন্ন প্রতিনিধি মিলে কথা বলার ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি সেটার কারণ সম্পর্কে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, এর একটা কারণ হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পটা গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। এছাড়া আমাদের দেশের সংস্কৃতি হল যখন কোন সমস্যা তৈরি হয়, তখন সেটা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়। সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে দীর্ঘ মেয়াদী আর যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা সব সময় কম থাকে। আমাদের গবেষণায় যেটা এসেছে সেটা হল ইস্যু ভিত্তিক অনেক উদ্যোগ নেয়া হয় এবং অনেকগুলো কাঠামো বিদ্যমান আছে। তবে সেগুলো যথাযথভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত না। যারা সমস্যা তৈরি হওয়ার আগেই ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা যাতে তৈরি না হয় বা সমস্যা তৈরি হলে সবাই মিলে যাতে সমাধান করতে পারে। এজন্য আমরা একটি স্থায়ী এবং আইনি কাঠামো তৈরি করার কথা বলেছি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
মতামত লিখুন :