Logo

আশুলিয়ার শ্রমিক অসন্তোষ : প্যান্ট চুরিসহ তিন মামলায় সাংবাদিক নাজমুলের রিমান্ড শুনানি কাল

RMG Times
রবিবার, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
  • শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : এবার প্যান্ট চুরিসহ তিনটি হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদাকে। ওই তিন মামলার রিমান্ড শুনানি আগামীকাল সোমবার। ঢাকার আশুলিয়া থানায় গত বছর করা এ তিনটি পুরনো মামলার এজাহারে সাংবাদিক নাজমুলের নাম ছিল না। এর পরও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন মামলায় মোট ১৯ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, কেবল হয়রানি করার জন্যই পুলিশ একের পর এক পেন্ডিং মামলায় নাজমুলকে জড়িয়ে দিচ্ছে।

অন্যদিকে সাংবাদিক নাজমুলের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার। জার্মানভিত্তিক বার্তা সংস্থা ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে সাভারের পুলিশের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদার মামলার এজাহারে অসত্য তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগ করা হয়েছে। জানা গেছে, এরই মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনসহ মোট ছয় মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সাংবাদিক নাজমুলকে। নেওয়া হয়েছে কয়েক দফা রিমান্ডে। এতেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। আরও কয়েকটি পেন্ডিং মামলায় নাজমুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে তার পরিবারের সদস্যদের।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, ‘এভাবে বারবার সাংবাদিককে রিমান্ডের আদেশ দেওয়া স্পষ্টতই রিমান্ড-সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রায়ই লক্ষ্য করছি, যেসব অপরাধ সংবাদমাধ্যমে আসছে, সেসব অভিযোগে অভিযুক্তকে বিচারকরা নির্বিচারে রিমান্ডে দিচ্ছেন। এতে জনমনে প্রশ্ন উঠবে, বিচারকদের জন্য রিমান্ড-সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বড়, না পুলিশের চাহিদা বড়। ’ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলার শুনানিতে আইনজীবীরা আদালতকে বলেছিলেন, এ মামলার অভিযোগের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা যে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করেছে, সেই সংবাদের কারণে শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি বা সরকারবিরোধী উসকানি দেওয়া হয়নি। যা ঘটনা শুধু সেটুকুই প্রচার করা হয়েছে। সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী ওই সংবাদে পুলিশ, বিজিএমইএ নেতাসহ নানা তরফের বক্তব্য যুক্ত রয়েছে। আসলে পূর্বশত্রুতার কারণে অসাধু ব্যক্তিদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য শ্রমিক উসকানির অছিলা দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে পুলিশ। সাংবাদিক নাজমুলের পরিবারসহ আশুলিয়ায় গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নাজমুল একাধিক রিপোর্ট করেন। এসব রিপোর্টের কারণে ক্ষুব্ধ হন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা নাজমুলকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ২৩ ডিসেম্বর তাকে আটক করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর আশুলিয়া থানায় আইসিটি আইনে নাজমুলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই মামলায় ইতিমধ্যে নাজমুলকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরিবার বলছে, গ্রেফতারের আগের দিন ২২ ডিসেম্বর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাজমুলের কথাকাটাকাটি হয়। তারা নাজমুলকে গার্মেন্ট নিয়ে কোনো নিউজ না করতে হুমকি দেন। সব স্বাভাবিক রয়েছে এ মর্মে নিউজ করতে পুলিশ কর্মকর্তারা নির্দেশ দেন তাকে। পরদিন আবার গার্মেন্ট নিয়ে নিউজ করলে ওই পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে আরেক দফা বাগবিতণ্ডা হয়। পুলিশের ওই কর্মকর্তারা নাজমুলকে শাসিয়ে চলে যান। ওই দিন সন্ধ্যায়ই নাজমুলকে আটক করা হয়। এদিকে নাজমুলকে গ্রেফতারের পর একের পর এক রিমান্ড চেয়ে পুলিশ প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন সাংবাদিক মহল ও সমাজের বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, ‘এ ধরনের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা থেকে পুলিশকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুলিশের এ ধরনের আচরণে আমরা উদ্বিগ্ন। ’ অবিলম্বে নাজমুলের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন তারা। নাজমুলকে গ্রেফতারের কারণে শুধু দেশের ভিতরই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়নি, বিদেশি সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছে।

আইন ও শালিস কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, সাংবাদিক নাজমুল কোনো মিথ্যা বা উদ্দেশ্যমূলক তথ্য পরিবেশন করেননি। বরং পুলিশই এজাহারে তথ্যবিকৃতি ঘটিয়েছে। নাজমুলের প্রতিবেদনে কোথাও ৬০০ পোশাক কারখানা বন্ধের তথ্য নেই। আছে ৫৫টি পোশাক কারাখানা বন্ধের কথা। কিন্তু পুলিশ তথ্য বিকৃত করে এজাহারে বলেছে, নাজমুল ৬০০ কারখানা বন্ধের কথা লিখেছেন। পুলিশের এ তথ্যবিকৃতি নিন্দনীয় এবং ন্যক্কারজনক। ’ প্রসঙ্গত, রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় নাজমুলের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজই প্রধান সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের সময় নাজমুলের সাহসী সাংবাদিকতার জন্য তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তথ্যচিত্রও নির্মাণ করে।

সৌজন্যে : দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন