Logo

ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ টাকা, শ্রমিক-মালিক; কার লাভ, কার ক্ষতি?

RMG Times
রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

মীর আলতাফ হোসেন সিপন, চট্টগ্রাম: গত ১৩/০৯/২০১৮ তারিখে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের ৫ম সভায় রপ্তানিমুখী তৈরী পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০০ টাকা,যেটি কার্যকর হবে ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাস থেকে।

প্রতিবারই এ খাতের বেতন বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে মিডিয়া পাড়া থেকে শুরু করে পোশাক কারখানা,বিজিএমই,বিকেএমইএ এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ইউনিয়নগুলো ব্যাপক মতভেদ দেখান,কোন কোন টিভি চ্যানেল লাইভ টক শো-এরও আয়োজন করেন,আমার ধারণা অনুযায়ী অন্য কোন খাতের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে এত হৈ হল্লা, তোড়জোড় ও পক্ষ বিপক্ষ মতভেদ পূর্বে কখনো দেখা যায়নি।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির সাথে সাধারণ মানুষরা প্রথমে যে আশংকাটি করেন সেটি হলো বাসা ভাড়া বেড়ে যাওয়া,আপনি স্বীকার করেন বা না মানেন পূর্ব থেকেই এটি রেওয়াজে পরিণত হয়ে আসছে,যা চলমান আছে। বাসা ভাড়ার সাথে সাথে অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও যে বেড়ে যাবে তা বলতে অর্থনীতি ভাল করে বোঝারও দরকার হবেনা। যদি তাই হয় তবে এ দিক দিয়ে হয়তো বেতন বাড়বে শ্রমিকদের কিন্তু লাভ অন্যদেরও হবে ।
শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিতে হয়তো কিছুটা হলেও শিক্ষিত বেকারদের উপকার হতে পারে, কারণ মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক পাশ করা অনেকেই আছেন যারা ৮০০০ টাকা বেতনের একটি চাকুরী খুঁজেও পাচ্ছেন না,অথচ পোশাক কারখানায় কিছু না জানলেও আপনি মাস শেষে পেয়ে যাবেন কমপক্ষে ৮০০০ টাকা!

ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকদের জন্য কতটুকু সহায়ক হবে আর কারখানা মালিকদের জন্য কতটুকু কষ্টকর হবে, যারা এ শিল্প নিয়ে কাজ করেন তারা অনুমান করতে পারেন। আর যারা অনুমান করতে পারেন না অথচ সভা সমাবেশে বলে বেড়ান, ন্যূনতম মজুরী ১৬০০০ বা ১৮০০০ না হলে শ্রমিকরা খেতে পারবেনা,মূলতঃ তারাই চান এ শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যাক,এ ধরনের সুবিধাভোগী কিছু মানুষ বিদেশে যেমন আছেন তেমনি তাদের আস্থাভাজন অনেকেই দেশে বসে বিছিয়ে দেন ষড়যন্ত্রের জাল।

দেশের মিডিয়াগুলোও রানা প্লাজা দূর্ঘটনার পর থেকে দেশ বিদেশে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার অনেক নেতিবাচক খবর প্রচার করেন,অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ করে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নত করার খবরগুলো প্রচার করা থেকে বিরত থাকেন।

এবারের বেতন বৃদ্ধি হওয়ার পর শ্রমিক এবং মালিকের কি ধরনের লাভ বা ক্ষতি হতে পারে তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান নীচে দেখুন:

*বেতন বৃদ্ধিতে শ্রমিকের কি ধরনের লাভ হতে পারে:

১. ৮০০০ টাকা বেতনের সাথে হাজিরা বোনাস এবং ওভারটাইমসহ একেকজন শ্রমিক মাসে কম পক্ষে ১১০০০ টাকা আয় করতে পারেন-এতে সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা তিনি আনতে পারবেন।
২. শ্রমিকের জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে।
৩. নিজেকে পরিবারের কাছে,দেশের কাছে স্বনির্ভর হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন।
৪. কাজের দক্ষতা দিয়ে আরো বেশী টাকা আয় করতে পারবেন।

বেতন বৃদ্ধি হওয়াতে কারখানা মালিকের কি ধরনের লাভ হতে পারে:

১. বেতন বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের মনোভাব পরিবর্তিত হতে পারে আর এতে উৎপাদন বেড়ে যেতে পারে।
২. শ্রমিকরা আরো বেশী দায়িত্বশীল হয়ে কারখানার উন্নয়নে সহায়তা করতে পারবে।
৩. বেতন সংক্রান্ত জটিলতায় শ্রমিকদের এক কারখানা থেকে আরেক কারখানায় চলে যাওয়া কমতে পারে এতে কারখানার দক্ষ শ্রমিকরা পূর্ণোদ্যমে কাজ করতে পারে।
৪. এক শ্রেণীর ব্যক্তিদের থেকে পাওয়া বদনাম “কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের রক্ত চুষে খায়”-এ জাতীয় ভাষা ব্যবহার কমতে পারে।
৫. বেতন বৃদ্ধির কারণে কারখানায় শিক্ষিত (মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাশ) শ্রমিক নিয়োগ দিতে পারবেন,এতে কারখানার দ্রুত উন্নতি হতে পারে।
৬. দেশের শিক্ষিত বেকার জনগোষ্টিকে চাকুরী প্রদানের জন্য বাহবা পেতে পারেন।

*বেতন বৃদ্ধিতে শ্রমিকের কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে:

১. যেহেতু কোন কাজ না জানা লোকও ৮০০০ টাকা বেতন পেতে পারেন তাই মালিকরা শিক্ষিত শ্রমিক পাবেন,এতে শিক্ষার কৌশলগত ব্যবহারের কারণে বর্তমানে কাজ করা শ্রমিকরা চাকুরী হারাতে বা পদোন্নতি নাও পেতে পারেন।
২. ছোট খাটো কারখানা গুলো আইন মেনে বর্ধিত বেতন প্রদানে অপারগ হয়ে কারখানা বন্ধ করে দিতে পারেন আর এর বলি হবেন শ্রমিকরা।
৩. নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে বাসাভাড়াসহ দ্রব্যমূল্য বাড়তে পারে,এতে সমস্যা বাড়তে পারে।
৪. কোন কোন কারখানা বর্ধিত বেতন প্রদান না করে পূর্বের বেতনে শ্রমিকদের কাজ করাতে পারেন,এতে তাদের ভাগ্যোন্নয়ন ব্যাহত হবে।
৫. উৎপাদন কর্মকর্তাদের থেকে প্রায়ই শুনতে হবে“এত টাকা বেড়েছে,প্রোডাকশন ও এত পিস দিতে হবে”।
৬. জবাবদিহিতা অনেক বেড়ে যাবে।

*বেতন বৃদ্ধিতে মালিকের কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে:

১. বেতন বৃদ্ধিতে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
২. ক্ষেত্র বিশেষে কারখানা চালনা করা সম্ভব নাও হতে পারে এতে যারা ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা করছেন তারা সমস্যায় পড়বেন।
৩. ক্রেতাদের দাম বাড়াতে চাপ বৃদ্ধি করতে হবে,এতে ক্রেতার সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।
৪. শ্রমিকের বেতন কিছু কিছু নির্ধারিত বেতনের স্টাফের থেকে বেড়ে যাবে,বাধ্য হয়ে তাদের বেতনও বাড়াতে হবে।
৫. আয় বাড়াতে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভবপর নাও হতে পারে।

শত প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাক দেশের তৈরি পোশাক খাত, এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।