ডেস্ক রিপোর্ট: সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব খোলা রাখা হবে দেশের সব পোশাক কারখানা। পাট, চামড়াসহ অন্যান্য কারখানাও একই নিয়মে চলবে। শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশে তাপমাত্রা পরীক্ষা এবং করোনা ভাইরাসের কোনো উপসর্গ জ্বর, হাঁচি-কাশি দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ছুটি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তবে গতকাল কর্মদিবসের শেষ পর্যন্ত কোনো কারখানায় শ্রমিকের মধ্যে এ রকম উপসর্গ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের নেতা ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বৈঠকে গতকাল শনিবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হবে। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দু’পক্ষ।
রাজধানীর শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক, বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, রপ্তানিকারকদের সংগঠন ইএবির সভাপতি সংসদ আবদুস সালাম মুর্শেদী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম, বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিপ্তরের (ডিআইএফই) মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায়, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমান, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান টি রহমান, এফবিসিসিআইর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করতে কারখানা মালিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠকে পোশাক কারখানা মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়. করোনাভাইরাস ইউরোপ এবং আমেরিকাসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ায় অনেক ক্রেতা রপ্তানি আদেশ বাতিল করেছেন। এতে উৎপাদন এবং রপ্তানি খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বানের দাবি জানানো হয়। শ্রমিকদের মাঝে করোনা যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে বিষয়ে মালিকরা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, সে বিষয়ে অবহিত করা হয়।
এদিকে গতকালও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ রাখার দাবি তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের জন্য রেশনসহ অন্যান্য জরুরি ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান তাসলিমা আখতার এক বিবৃতিতে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বাদ দিয়েছে সরকার। তবে রপ্তানি আয়ের ৪০ লাখ শ্রমিকের নিরাপত্তায় কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে না।
এদিকে কোনো কারখানার রপ্তানি আদেশ বাতিল না করার জন্য বিশ্বের ৪০টি ব্র্যান্ডের কাছে চিঠি লিখেছেন বিজিএমইএ সভাপতি। চিঠিতে শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনা এবং দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থে যে কোনো পরিস্থিতি একসঙ্গে মোকাবিলায় ক্রেতাদের সহযোগিতা চান তিনি। এ ছাড়া বিজিএমইএর পক্ষ থেকে শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রতিকারে করণীয় ১০টি পরামর্শ সংবলিত একটি লিফলেট প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের সব কারখানার শ্রমিকদের মাঝে এসব লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
মতামত লিখুন :