Logo

চাকরী আছে, চাকরী নেই!

RMG Times
বুধবার, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
  • শেয়ার করুন

ওয়ালিদুর রহমান : প্রায়ই বেকার যুবক, সদ্য পাশ করে বেরোনো গ্রাজুয়েটরা চাকরী চেয়ে মেসেজ পাঠান, মেইলে সিভি পাঠান। এর ওর কাছ হতে ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করেন। নানারকম পরিস্থিতির শিকার চাকরীপ্রার্থীরা নানাভাবে এ্যপ্রোচ করেন। আবার অনেক মানুষ আছেন হয়তো ভালভাবেই জব করে সুন্দর জীবনযাপন করছিলেন। মাঝপথে ভাগ্যের ফেরে নতুন করে পথে নামতে হয়েছে সম্পূর্ণ অজানা এক জগতের সাথে লড়াইয়ে। জীবন যখন সাজিয়ে ফেলেছেন তখনি অজানা অনিশ্চয়তায় নুতন করে স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তানের প্রতিপালনে নতুন করে সংগ্রামে নামতে হয়। যাদের কাছে জীবনেও সামান্য একটি সিগারেটও চাইতে হয়নি তাদের কাছে, সম্পুর্ন নতুন মানুষদের কাছে নতুন করে নিজেকে চেনাতে হয়।

আজ আমার লেখা তাদের জন্য মানবিকতা ধার করা নয়। এই দুই ধরনের চাকরীপ্রার্থীরা ঠিক কোথায় আটকে আছেন, কেন আমরা বেশিরভাগ চাকরীজীবিরা অনিশ্চয়তার চোরাগলিতে আটকে আছি, অধিকাংশ চাকরীপ্রার্থী ঠিক কোন ভুলটি সবাই গণহারে করছেন তার উপর আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলব। এটি কোনো ট্রাডিশনাল ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং নয়। এইচআরে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে চাকরীপ্রার্থীদের যেসব ভুল নজরে আসে তার একটা সংকলন।

১.আমাদের সদ্য চাকরীর বাজারে আসা গ্রাজুয়েট বা মাস্টার্স যারা বিভিন্ন প্রখ্যাত বা অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা মাত্র শেষ করলেন বা প্রায় শেষ করে ফেলেছেন, তারা সবচেয়ে বড় যে ভুলটি করেন তা হল, তাদের বদ্ধমূল ধারনা যে, শুধুমাত্র তার মাস্টার্স ডিগ্রিটিকেই চাকরী পাবার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা। ফলে তারা উচ্চতর পড়াশোনার ৫-৬ টি বছর শুধুমাত্র একাডেমিক ডিগ্রিটি ছাড়া অন্যান্য যোগ্যতা অর্জন বা বাড়ানোর খুব একটা চেষ্টা করেন না। বিধায় ৫-৬ বছর বা তার বেশি সময় একাডেমিতে কাটানোর পরে যখন তারা বের হন, তখন ঝুলিতে শুধু ৪টি ডিগ্রি ছাড়া বাড়তি কোনো রসদ তাদের হাতে থাকে না।

২.আমাদের ভাল লাগুক বা না লাগুক, চাকরী বাজারের বাস্তবতা হল, ইংরেজিতে আমাদের চাকরীপ্রার্থীদের মারাত্মক রকম দুর্বলতা। কী বলায়, কী লেখায়! তাদের অত্যন্ত নড়বড়ে অবস্থা। অনেকে বলবেন, ইংরেজি তো জাস্ট একটি ভাষা, ইংরেজিতো জ্ঞান নয়, নিজের মাতৃভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজি নিয়ে কেন পড়লাম? ভাই, আমি চাকরীর বাজারের বাস্তবতার কথা বলছি। আবেগ বা নৈতিকতা নয়। যিনি বা যেই কোম্পানীরা চাকরী দেবে তারা যদি ইংরেজিতে দক্ষতা খোঁজেন আর আপনি মাতৃভাষার দোহাই দিয়ে অভিমান করে ইংরেজিকে দুরে সরাতে চান-তাহলে কী করার? কী করে ইংরেজিতে দক্ষ হবেন? হাজারটা বুদ্ধি দেয়া সম্ভব। অনেকেই অনেক তরিকা বলতে পারবেন। আমি একটা আপাতত বলি? কমিটমেন্ট আর প্রাকটিস। এদুটোই ৮০% কাজে দেবে। বাকিগুলো মিলে ২০%।

৩.দুঃখজনক হলেও সত্যি, ইংরেজিতে তো বললামই। আমাদের চাকরীপ্রার্থীদের একটা বিরাট সংখ্যক অংশ এমনকি বাংলাতেও ঠিকমতো গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না। বলবেন, এ আবার কেমন কথা, বাঙালী ছেলে, বাংলায় কথা বলতে পারে না-এমন কথাও বিশ্বাস করতে হবে? হ্যা ভাই, বাংলায় কথা বলা আর বাংলায় ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে উপস্থাপন করা এক জিনিস নয়। মনে রাখবেন, চাকরীর ইন্টারভিউ মোটা দাগে হল নিজের যোগ্যতাকে নিয়োগদাতার কাছে মার্কেটাইজ করার স্থান। সেখানে নিজের যোগ্যতাকে বিক্রি করা শিখতে হবে।

৪.কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষতার অভাব একটা অমার্জনীয় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে বলে আমার মনে হয়। যদি আপনি কম্পিউটার অপারেশনে দক্ষ না হন তাহলে আজই যা করবার করুন।

৫.সিরিয়াসনেস কতটা আছে একজন চাকরীপ্রার্থীর সেটাও ফ্যাক্টর। মাঝেমধ্যেই আমাদের কাছে চাকরীপ্রার্থীরা আসে কোনোমতে একটা টী-শার্ট বা ক্যাজুয়াল হাওয়াই শার্ট পড়ে, অবিন্যস্ত দাড়ি, কখনো চটি জুতা পড়েই। বহুবার হয়েছে ক্যান্ডিডেট ইন্টারভিউতে এসেছেন কলম ছাড়া। বলতে পারেন জুতা, জামা, দাড়ি যোগ্যতার মাপকাঠি না। ভাই, আমি নিয়োগকর্তাদের চোখে চাকরীপ্রার্থীর কোনদিকগুলো ভুল মনে হয় সেটা বলছি। আপনি যদি নিয়োগকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপারে দ্বিমত পোষন করেন তাহলে তার কাছে চাকরী চাওয়া কেন? তাছাড়া দেশের চাকরীর বাজারের ন্যাচারই এমন। আপনি তো আর দেশ ও সমাজ পরিবর্তন করতে আসেন নি। মনে রাখবেন, আমি একবারও বলছিনা, এই বিষয়গুলো (যেগুলো আমি বলছি) সেগুলো না থাকা মানেই ব্যক্তি অযোগ্য। যোগ্যতার বহুরকম পারসপেকটিভ আছে। আমি শুধু বলছি চাকরীর ইন্টারভিউ বা চাকরী চেয়ে ব্যর্থ হবার কিছু সাধারণ কারণ।

৬.কোনো ইন্টারভিউতেই বোধহয় আলাদা করে বলা হয় না যে সঙ্গে করে সিভি নিয়ে আসবেন যেহেতু কোম্পানী সিভি দেখেই তাকে ডেকেছে। তবু জানবেন এরপরও এককপি সিভি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। বহুবার হয়েছে ইন্টারভিউয়ার জানতে চেয়েছেন সিভি নিয়ে এসেছেন? ”না স্যার, আনতে হবে তাতো বলেনি”।

৭.বিভিন্ন মিডিয়ামে যেমন মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে চাকরীপ্রার্থীরা নক করেন, মেসেজ দেন। কেউ কেউ নিয়ম করে মাঝেমধ্যেই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসবই ভাল। তবে ভুল কোথায় করেন? ভুলটা হল লেগে না থাকা এবং এ্যাপ্রোচিং। কিভাবে একজন অপরিচিত কর্পোরেট পার্সনকে চাকরীর জন্য এ্যাপ্রোচ করতে হয় সেটা ভেবে করা উচিৎ। মনে রাখতে হবে, তিনি বা তারা অবশ্যম্ভাবিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়ীত্বশীল উঁচু পদে কাজ করছেন। তাদের কিভাবে এ্যাপ্রোচ করলে তারা সেটা পজিটিভলি নেবেন, তাদের সময়ের মূল্য কতটা, তারা কতটা ব্যস্ত থাকেন, আপনাকে কতটা সময় দেবেন সেটা বুঝতে হবে। কাউকে কাউকে দেখি ধুমকেতুর মতো এসে একটা গুড মর্নিং, অতঃপর চাকরীর অনুরোধ, অতঃপর তার কারন ব্যখ্যা। ক্ষণিক চ্যাটের পরেই উধাও। হঠাৎ ৭ দিন পরে আবার নক, খানিক মেসেজিং-উধাও। আবার তার ৩ ঘন্টা পরে নক। রাতের গভীরে নক। নাহ, এভাবে আর যাই হোক, আপনি একজন কর্পোরেট পার্সনকে আপনার জন্য কাজ করাতে পারবেন না। কিভাবে পারবেন সেটা একটু নিজেই ভাবলে পাবেন। তবে সংক্ষেপে বললে বলব সিরিয়াস হোন, সাবধানি হোন, ধারাবাহিক হোন। চাকরি বাগানো একঘন্টার টি-টুয়েন্টি না। এটি একটি দীর্ঘ অভ্যাস, চর্চা, প্রস্তুতি, সম্পর্কের বিষয়। কী ভাষায়, কোন স্টাইলে এ্যাপ্রোচ করছেন সেটি ম্যাটার করে।

৮.চাকরীপ্রার্থীরা মনে করে, শুধু ডিগ্রি থাকলে বা কয়েকটি ছোটখাটো ট্রেনিং থাকলেই যথেষ্ট। অনেকেরতো সেটিও নেই। সেটিই সবচেয়ে বড় ভুল। ঠিক কতটুকু প্রস্তুতি এবং কী কী বাড়তি যোগ্যতা আপনার থাকলে আপনি চাকরীর দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন তার কোনো সীমানা নিজেই টানবেন না। কখনোই আত্মপ্রসাদে ভুগবেন না। তবে হ্যা, কখনোই কনফিডেন্স হারাবেন না। আমি আমার দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর যেই চাকরীতে প্রথম ঢুকি, আমার মনে আছে, আমি যেদিন সেই চাকরীর চুড়ান্ত ভাইভা দিতে যাই, ওয়েটিং রুমে বসে আছি, আমার বন্ধু বাবু আমাকে ফোন করল। বলল, ভয় পাচ্ছেন? আমি স্বীকার করলাম হ্যা, নার্ভাস। বাবু বলল, বুকে সাহস আনুন আর মনে মনে বলুন, “আজ যদি একজনেরও চাকরী হয় সেটা আমার হবে।” বহু কোয়ালিফাইড প্রার্থীকেও দেখেছি নার্ভাসনেসের কারনে কিছুই করতে পারেননি।

৯.আজকাল ইন্টারভিউ ফেস করবার প্রস্তুতি ও নিয়ম সম্পর্কে ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলে এমনকি বাংলায়ও প্রচুর কনটেন্ট, ভিডিও, আর্টিকেল আছে। আমার ধারণা, আমাদের বিশাল সংখ্যক চাকরীপ্রার্থীরা ওগুলো দেখারও দরকার মনে করেন না। আমার ধারণা ভুল হলে আমি খুশি হব। চাকরীপ্রার্থী আসেন যারা একদমই ইন্টারভিউ ফেস করবার জন্য প্রস্তুত নন। যদি ভেবে থাকেন একবারেই মাঠে নেমে ছক্কা হাঁকাবেন তবে ভুল করবেন। দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক ও পরিকল্পিতভাবে রেডি হোন। ও হ্যা, পারলে মক ইন্টারভিউ চর্চা করুন।

১০. ওদিকে স্টিভ জবস, জুকারবার্গ, বিল গেটস ও এদিকে আমাদের রবীন্দ্রনাথ-এনাদের স্কুল ফাঁকি দেয়া বা প্রথাগত একাডেমিক পারফর্ম্যান্সের ঘাটতিকে কেউ কেউ নিজের জীবনের ব্রত বানিয়ে নিয়ে থাকলে ভুল করবেন। স্কুলপালানো আইনস্টাইন হাজার বছরে একজনই পৃথিবীতে আসে। আপনি চেষ্টা করে তাদের মতো হতে পারবেন না। তারা বাই বর্ন অমন। তাই অন্তত চাকরী পাওয়া এবং পাওয়ারও কমপক্ষে ৫ বছর পর পর্যন্ত একাডেমিক বিষয়ের জ্ঞান ধরে রাখুন। এমনও হয়েছে ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞাসা করেছি, পরমানুতে কী কী থাকে। বলতে পারে নি।

১১.কমিউনিকেশানের ব্যর্থতায়ও চাকরীপ্রার্থীরা ভাগ্যতাড়িত হন। বহুবার হয়েছে ক্যান্ডিডেটকে ফোনে ডাকা হয়েছে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তিনি প্রশ্ন করেন-”কোন পদের জন্য ডাকছেন (তিনি আবেদন করেছেন আর তিনিই জানেন না); আমি তো জানি না, আমার বন্ধু বিডিজবসের মধ্যে আমার জন্য সিভি দিয়েছে; বেতন কত দেবেন? ঠিকানাটা মেসেজ করবেন? আমি এখন রাস্তায় আছি, পরে ফোন করেন……..অথবা পুরো বিষয়টি শোনার পর বলেন, ঠিকানাটা আবার বলবেন, ভুলে গেছি।” সাথে সাথে তার চাকরী দেবার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন নিয়োগদাতা। মনে রাখবেন, ফোন কলেই আপনাকে অনেকটা মেপে ফেলবে চাকরীদাতা-অবশ্য যদি স্মার্ট এমপ্লয়ার হয়। চাকরী পেতে হলে সারাক্ষণই সিরিয়াসলি সেটার জন্য প্রস্তুত থাকুন, চেষ্টা করুন। একটি সামান্য বিষয়কেও অবহেলা করবেন না।

১২.শুরুতেই ছক্কা মারার ই্চ্ছা দমন করুন। অনেকেই স্বপ্ন নিয়ে আসেন, প্রথম চাকরীতেই ৫০ হাজার টাকা বেতন হাঁকাবেন, ২ বছরে ম্যানেজার হবেন, এসি রুমের অফিস করবেন, ৯টা ৫টা অফিস করবেন। ক্যারিয়ার বাছুন, চাকরী নয়। অনেকে আবার শুরুতে হুটহাট দুম করে অনেকগুলো চাকরী বদল করে বেতনটা আকাশচুম্বি করে নেন। এতে সাময়িক লাভ হয় বটে। তবে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি। নিয়োগদাতা আপনার সুইচিং মোড দেখে পরবর্তিতে আপনার প্রতি আস্থা হারাবেন। মনে রাখবেন, কোম্পানীগুলো একটু লো কোয়ালিটি হলেও স্টেবল লোক চায়।

১৩.অনেকেই আবার চাকরীতে যেন শিকড় গজিয়ে ফেলেন। হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন প্রতিষ্ঠানে। এখান থেকে কখনো যেতে হতে পারে সেই বিষয়টা ভুলে যান। নিজের আর কোনো রকম ব্যক্তিগত উন্নয়ন ঘটান না (সফট ও হার্ড স্কীলে)। ফলে নিয়োগদাতার মন ঘুরলে তিনি পড়েন অথৈ পাথারে। সবসময় মনে রাখুন, আপনাকে যেকোনো দিন জব ছাড়তে হতে পারে। নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোয়ালিফিকেশনে সজ্জিত রাখুন। রেডি থাকুন। আর হ্যা, নির্দিষ্ট একটি সেকটরে-নির্দিষ্ট একটি টাইপের কাজে-নির্দিষ্ট একটি ঘরানার চাকরীতে থেকে যাওয়া ভাল নাকি ধরন ও সেকটরে ভেরিয়েশন থাকলে ভাল সেটি আগেই ভাবুন। এক ধরনের কাজে স্পেশালাইজ হলে আপনি সেই কাজে বেশি সম্মান, গুরুত্ব ও বেতন পাবেন। তবে সমস্যা হল সেই সেক্টরটি পড়ে গেলে, আপনি জব হারালে, অন্য ধরনের জবে আপনি চান্স কম পাবেন। আবার নানা ধরনের জবে এক্সপিরিয়েন্স থাকলে অসুবিধা হল কোনোটাতেই আপনি বিশেষজ্ঞ নন। ফলে নির্দিষ্ট কোনো ধরনের নিয়োগদাতা আপনার উপর খুব বেশি আস্থা রাখতে পারেন না।

১৪.অনেকেই হয়তো দ্বিমত হবেন আমার সাথে এই ব্যাপারে যে, আমি মনে করি, একটি এমবিএ করার চেয়ে চাকরীতে ঢোকা বেশি জরুরী। বেশ কয়েক বছর চাকরী করার পরে এমবিএ করাটা বেটার। কারন এমবিএ হল প্রফেশনাল দক্ষতা এবং ম্যানেজারিয়াল যোগ্যতার ডিগ্রি। তাছাড়া এখন বেশিরভাগক্ষেত্রেই এমবিএ হল কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মাস্টার্স ডিগ্রির পরিবর্তিত রূপ। আমি সিওর নই, তবে মনে হয় সেগুলো টোটাল এমবিএ নয় যেটা আইবিএতে পড়ায় বা ভারতের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেয়। তাই আপনার যদি চাকরীর বা প্রতিষ্ঠানে কাজের ব্যাপারই না হল তবে এমবিএ কেন? ওটা তাই গ্রাজুয়েশন করে চাকরীতে ঢুকে থিতু হয়ে পরে করুন। ততদিন বেশ অনেকটা এক্সপিরিয়েন্সও জমা হবে। নিজের টাকায় তখন পড়তে পারবেন। বাবা-মায়ের ওপর চাপও কমবে। এমবিএটা কাজেও লাগাতে পারবেন।

১৫.একটা সাইড টক। গ্রাজুয়েশন করাকালীনই ঠিক করে নিন-সরকারীতে নাকি বেসরকারীতে ক্যারিয়ার গড়বেন। দু’টোর প্রস্তুতি দু’রকম। তাই দ্রুত ঠিক করুন। সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার করতে বেশি পারবেন তাহলে।

১৬.একটা কথা বলি? বলতে পারেন আপনি এত পন্ডিত। আপনি কী এমন হাতিঘোড়া জীবনে হতে পেরেছেন? না ভাই, আমি হাতি বা ঘোড়া কোনোটাই জীবনে হতে পারিনি। ক্যারিয়ারে তেমন সুবিধাও করতে পারিনি। তাহলে এতকিছু আপনাদের কেন বলছি? বলছি এজন্য যে, আমি যদি ভুল করে থাকি সেটা যেন আপনাদের ক্ষেত্রে না হয়।

১৭.শুধু ব্যক্তিগত যোগ্যতা থাকলেই আপনার ভাগ্যের দ্বার খুলবে-এমন নিশ্চিত ধারনা করলে ভুল করবেন। যোগ্যতার পাশাপাশি আপনাকে খুব ভাল নেটওয়ার্ক বজায় রাখতে হবে। প্রফেশনাল সাইট, ক্যারিয়ার কনসালট্যান্ট, সোসাল নেটওয়ার্ক, লিংকডইন, বিডিজবস-সর্বত্র ‍সচেতন ও পরিকল্পিত বিচরন থাকতে হবে।

১৮.যদি টপ-৫ প্রস্তুতি বলতে পারতাম তাহলে বলতাম-উপযুক্ত সিভি না বানানো চাকরীপ্রার্থীদের একটা বড় অংশের শুরুতেই বাদ পড়ার কারন। প্রফেশনাল ও আধুনিক সিভি কেমন হওয়া উচিৎ-সেটার নানান ব্যাখ্যা আছে। আ্মি শুধু বলব, সিভি তথ্যবহুল, সহজ, সংক্ষিপ্ত ও চাকরীর ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা হওয়া উচিৎ। ক্যান্ডিডেটরা মনে করেন একটা দারুন সিভি থাকলে সেটা রেলের কেরানী হতে সচিব পদ-সর্বত্র আবেদন করা যাবে। ভুল। সিভি হতে হবে পোষ্ট বাই পোষ্ট।

১৯.চাকরীটা আপনার জীবনমরণ পণ করে হলেও দরকার-সেটা নিয়োগদাতাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন না। সেটা আপনাকে হেল্প করবে না। ইন্টারভিউয়ারকে নিজের ইমোশন, ব্যক্তিগত বিষয়, চাকরীর ডেসপারেট নিড বোঝানোর রাস্তায় হাটবেন না। ইন্টারভিউয়াররা তাতে গলেন না। বরং স্মার্ট ইন্টারভিউয়ার ও স্মার্ট কোম্পানী হলে এতে আপনার সুযোগ আরো কমবে। তাহলে কী করবেন? তাই বলে আবার এমন ড্যামকেয়ারও হবেন না যাতে মনে হয়, চাকরী না হলে আপনি থোরাই কেয়ার করেন। যাই করেন, ক্যালাস, হ্যাংলা ও ওভারস্মার্ট হবেন না। নিয়োগদাতার সামনে নিজের জীবনের দুঃখের ঝাপি খুলে বসবেন না। বরং নিজের সবগুলো যোগ্যতার তুণীরের তীর মেলে ধরুন।

২০.আপনি সব জানেন বা পারেন-এমনটা প্রমানের চেষ্টা করবেন তো মরবেন। যেটা পারেন না সেটা আন্দাজে বলে বিপদ বাড়াবেন। মনে রাখবেন, স্মার্ট ইন্টারভিউয়ার আপনি কত বেশি বেশি জানেন/পারেন সেটার চেয়ে বেশি দেখতে চান আপনি কতটা স্মার্টলী আপনার জানা বা না জানাকে উপস্থাপন করেন এবং কিভাবে ওগুলোকে ব্যবহার করেন।

২১.ফ্রি হ্যান্ড লিখতে না পারার অমার্জনীয় ব্যর্থতা প্রচুর ক্যান্ডিডেটের ড্রপ হবার কারন হয়। লেখার চর্চা করুন।

২২.নিজের অধিকার নিজে বুঝে নিন। বোর্ডে কত বেতন চান-জিজ্ঞেস করলে দু’রকম শুনি-হয় আসমান সমান অথবা বলে আপনারা যা দেবেন। দু’টোই ভুল। নিজের অধিকার নিজে কনফিডেন্টলী চেয়ে নিন। তবে হ্যা, প্রত্যাশাটি ব্যক্ত করার আগে মার্কেট যাচাই করে যাবেন।

২৩.আজকাল একটা কমোন অভিযোগ করে চাকরী সন্ধানীরা। সিভি চাওয়া হয় কিংবা বিজ্ঞাপন দেয়া হয় অথচ সিভি পাঠালে ডাকে না। কোনো প্রতিষ্ঠান হতে ডাকই পাই না, কী করে যোগ্যতা প্রমান করব। আমি স্বীকার করব ঘটনা অনেকখানি সত্যি। তবে আপনারও কিছু ভুল আছে। ভেবে দেখুন এমন কিনা-ভুল ধরনের প্রতিষ্ঠানে গণহারে আবেদন করেছেন, সিভি উপযুক্ত নয়, সিভি আকর্ষনীয় নয়, আপনার যোগ্যতার সাথে প্রতিষ্ঠানের চাওয়া মেলে না, সিভি পাঠাতে বলেছে কিন্তু আপনার উচিত ছিল সেই মেইলে বা ডাকে সুন্দর একটি কভার লেটারও দেয়া। আর হ্যা, ভাবুন তো, দেশে লক্ষ লক্ষ বেকার। একটি চাকরীর বিজ্ঞাপন দিলে হাজার হাজার দরখাস্ত পড়ে। নিয়োগদাতার পক্ষে কি সম্ভব সব সিভি পড়ে দেখা। সব মেইল চেক করা? নজরে পড়ার সব চেষ্টা তাই করুন। আর হ্যা, টিপিক্যাল মেইল এ্যাপ্রোচ বা বিডিজবসে এ্যাপ্লাই অনলাইন-শুধু এই তরিকায় ভরসা রাখলে ভুল করছেন। নিয়োগদাতাদের কাছে পৌছানোর আরো স্মার্ট রাস্তা খুঁজুন। আপনার পর্বতসমান যোগ্যতা নিয়ে তো লাভ নেই। কোন নিয়োগদাতা জানে আপনি কোন কোণায় পড়ে আছেন? নিজেকে, নিজের যোগ্যতাকে বলতে গেলে বিক্রি করতে মার্কেটে তুলুন নিজেকে।

বলতে পারেন দরকার কী আমার এত এত প্রস্তুতি, সতর্কতা, জান লড়ানোর? আরে ভাই, আমি তো আপনাকে জান লড়াতে বলিনি। এত এত কিছু তখনি করবেন যখন আপনি চাকরীর বাজারের উমেদার হতে চান। আর তা যদি নাই চান, ওয়েল এ্যান্ড গুড। ইনভেস্টর হোন, এন্টারপ্রেনিয়ার হোন, ব্যবসা করুন। একদিন বিরাট ধনী ব্যবসায়ী বনে যাবেন। তখন আপনি ঠিকই এগুলো দেখেই তবেই আপনার প্রতিষ্ঠানে লোক নেবেন। আমি নিজে ব্যবসা করিনি। চাকরগীরি বেছেছি। আপনাদের বলব, বয়স থাকতে ব্যবসা করার কথা ভাবতে পারেন। নিজের ছোট্ট একটি ব্যবসা দারুন একটি চাকরীর চেয়ে শ্রেয়।

পুনশ্চ: যারা নিয়োগদাতা, ইন্টারভিউয়ার, বড় চাকরীতে আছেন তারা যদি এই লেখা পড়েন তাহলে অনুরোধ করব, দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ইন্টারভিউয়াররাও একটু লিবারেল হোন। আর বেকার যুবকরা এমনিতেই প্রচন্ত ফ্রাস্ট্রেশন নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। নার্ভাস থাকেন। চাকরী হবে কিনা-এই আতঙ্কে চাকরীর সুযোগ নষ্ট করেন। সবই এই দেশের করুন বাস্তবতা। ভাবুন, আমরা নিজেরাও একদিন এমন করেই দৌড়েছি। এমন করেই হয়তো আমাকে নিজেকেই একদিন আবার রাস্তায় নামতে হবে চাকরী খুঁজতে। তাই একটু মানবিক হোন। একটু পজিটিভ হোন, লিবারেল হোন। প্রার্থীদের ডাকুন, সিভি চেয়ে না ডাকার মস্করা পরিহার করুন, প্রার্থীদের ভিতরকার যোগ্যতা যাঁচাই করুন। আর হ্যা, নিজের শালা, সমন্ধি, কাজিন, বন্ধুদের শুধু নয়, অন্যদেরও একটু চাকরী করবার সুযোগ দিন।

লেখক : মানবসম্পদ পেশাজীবি